ঘড়ির কাঁটায় রাত ৯ টা বেজে ১০ মিনিট। মগবাজার ফ্লাইওভারের ওপর বলাকা বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিং এর সাথে ধাক্কা খেতে খেতে নামতে থাকে। আমাদের বাসের যাত্রীদের চিৎকারে পাশে থাকা বাসের ড্রাইভার ঘটনা টের পেয়ে তাঁর বাস দিয়ে আমাদের বাসটিকে পাশ থেকে চেপে ধরার চেষ্টা করে, এক পর্যায়ে বাম পাশে ফ্লাইওভারের রেলিং এবং ডান পাশ থেকে বাসটির চাপে আমাদের বাসটি থেমে যায়। নামতে গিয়ে দেখি, বাসের দরজার অংশ ফ্লাইওভারের রেলিং এর সাথে থেঁতলে লেগে আছে, স্বাভাবিক ভাবে নামার উপায় নেই।
দরজা থেকে লাফ দিলে সোজা গিয়ে পড়তে হবে ফ্লাইওভারের নিচে। বাধ্য হয়েই নারী-পুরুষ সবাই বাসের জানালা দিয়ে নামতে শুরু করল। আমার সামনের মেয়েটি নামতে গিয়ে পড়ে পায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েছে, দেখলাম রাস্তার উপর অনেক্ষন বসে আছে দাঁড়াতে পারছে না। লোকজন এসে ধরাধরি করে টেনে তুলল।
আমি যখন জানালা দিয়ে নামছিলাম, পাশে দাঁড়ানো বোরখা পরা একটি মেয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠল- 'ভাইয়া আমি প্রেগনেন্ট আমি কিভাবে নামবো?' বললাম আপনি দাঁড়ান ব্যবস্থা করছি। আমার পর নামল আমার অফিস কলিগ (প্রাণের ভাই) সিরাজ ভাই। তার পর লোক জনকে চিৎকার করে বললাম আমার আপুটা অসুস্থ, আপুকে নামতে দিন।
মেয়েটি জানালায় উঠলে বললাম- আপু লাফ দিবেন না, আস্তে আস্তে জানালায় বসে পড়ুন।' সিরাজ ভাই কে বললাম- ' ভাই আপুটা প্রেগনেন্ট একটু হেল্প করেন।' ততক্ষণে আপুটি জানালা দিয়ে নিচে নেমে আসছিল, আমরা দুজনে নিচ থেকে হাত বাড়িয়ে তাঁর দুই বাহুতে ধরে ফেললাম। নিচে নামিয়ে এনে জিজ্ঞেস করলাম- 'আপুনি ঠিক আছেন? কোন অসুবিধে হয়নিতো? হাসি দিয়ে বললেন- ' না ভাইয়া কোন অসুবিধা হয় নি।
আসলে মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে যেতে পারত বড় কোন দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা ঘটার পর নাম মাত্র উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হত, তারা তাদের রিপোর্ট পেশ করত- 'বাসের ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল, ফিটনেস ছিল না, হেল্পার ড্রাইভিং করছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। বেশ, এটুকুর মধ্যেই থেমে যেত সব, ভুলে যেত পরবর্তি পদক্ষেপ কি নিতে হবে আর কি করতে হবে। কিন্তু এ দায় কার?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন